প্রাচীন ভারতে বর্ণ ও জাতি কী দুটি পৃথক ব্যবস্থা ছিল | History Honours Suggestion | Calcutta University

প্রাচীন ভারতে বর্ণ ও জাতি কী দুটি পৃথক ব্যবস্থা ছিল | History Honours Suggestion | Calcutta University

প্রাচীন ভারতে বর্ণ ও জাতি কী দুটি পৃথক ব্যবস্থা ছিল | History Honours Suggestion | Calcutta University 


যে-কোনো যুগ বা পর্বের ইতিহাস আলোচনার সময় কয়েকটি ক্ষেত্র আমাদের আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে আর সেগুলি হল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক আর সর্বশেষে সামাজিক ক্ষেত্র। এই সামাজিক ক্ষেত্রের একটি দিক বা অঙ্গ হিসাবে জাতিভেদ ব্যবস্থা আমাদের আলোচ্য বিষয় হিসাবে উঠে আসে। প্রাচীন ভারতীয় সামাজিক কাঠামো আলোচনা প্রসঙ্গে বর্ণ ও জাতি শব্দ দুটির বহুল ব্যবহার দেখা যায়। 

 

প্রাচীন ভারতের সমাজ কাঠামোয় জাতি বলতে এক  আহারে এবং বিবাহে নির্দিষ্ট সীমা লঙ্ঘন করে না। প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে ‘বর্ণ’ শব্দটির বহুল ব্যবহার পাওয়া যায়, কিন্তু ‘জাতি’ শব্দের ব্যবহার বিশেষ পাওয়া যায় না। ঐতিহাসিক ব্যাসামের মতে, জাতির ধারণা এসেছে পোর্তুগিজদের হাত ধরে। যাই হোক মৌর্য ও মৌর্যোত্তর এই যুগপতে বর্ণ ব্যবস্থার ভাঙন ঘটেনি তবে বহুধা বিভক্ত জাতির, অস্তিত্ব আমরা দেখেছি। একই বর্ণের অন্তর্গত বিভিন্ন জাতির অস্তিত্ব চোখে পড়ার মতো। শোনা যায় যে, ব্রাহ্মণ্য বর্ণের মধ্যেই নাকি প্রায় ২০০ টির মতো জাতি বিভাজন ছিল।


এ যুগে প্রচলিত সামাজিক বর্ণভেদের সঙ্গে সামাজিক-অর্থনৈতিক জাতিভেদ ব্যবস্থাও উদ্ভূত হয়েছিল। এই দুটিই ছিল তৎকালীন সমাজ সংগঠনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ সময় বর্ণের পরিবর্তে অর্থকৌলীন্যের দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রাজনৈতিক অধিকার ক্রমশ ক্ষত্রিয়ের হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় রাষ্ট্রচিন্তায় ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় মৈত্রী দেখা যায়৷ অন্যদিকে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়ের সঙ্গে বৈশ্য-শূদ্রের বৈষম্যকে বড়ো করে দেখানো হয়েছিল। সমাজে শূদ্রদের অবস্থা প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। ব্রাহ্মণ্য সাহিত্যে বর্ণিত জাতিভেদ ব্যবস্থা যে নির্বিঘ্নে চলেছিল, তা বলা যায় না।


বর্ণের সংখ্যা রয়েছে সাধারণত চারটি। কিন্তু জাতি কার্যত অসংখ্য। আদি চতুর্বর্ণের মধ্যে অসবর্ণ বিবাহের ফলে মিশ্রজাতির উৎপত্তি। আর এই মিশ্রণ অসংখ্য হওয়ায় জাতিসংখ্যার ঊর্ধ্বসীমা বাঁধা অসম্ভব। মনুর বর্ণনা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, মিশ্রজাতিগুলি চতুর্বর্ণ প্রথা থেকেই সৃষ্ট। মৌর্য থেকে মৌর্যোত্তর তথা আলোচ্য কালপর্বে এই প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে ভিন্ন গতিতে এগিয়েছে। 


সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন ভারতে বর্ণ এবং জাতি দুটি সম্পূর্ন পৃথক ব্যবস্থাই ছিল। তবে অনেকসময়  বর্ণের মধ্যে দিয়ে সংকর জাতির উদ্ভব হয়েছিল যা পরবর্তীকালে বিভিন্ন পেশার বা বৃত্তি গ্রহণের মধ্য দিয়ে সমাজ ব্যবস্থার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মর্যাদার অধিকারী হয়েছিল।


 তথ্য সুত্রঃ

১. ভারতীয় সভ্যতার বিবর্তন | আজিজুল বিশ্বাস, মো: সরোয়ার জাহান, নারায়ণ নন্দী।


২. ইতিহাস পরিক্রমা- অধ্যাপক এস মল্লিক।


৩. ভরতবর্ষের ইতিহাস- প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগ - গোপালচন্দ্র সিনহা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×