চীনের প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের কারণ বা পটভূমি



 চীনের প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের কারণ বা পটভূমি 


সূচনা: 

বিশ শতকের সূচনাপর্বে চিনে একদিকে বিদেশি নিয়ন্ত্রণ অন্যদিকে মাঞ্জু বংশের অপশাসন বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই সময়ই চিন পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠে। চিনের শিক্ষিত তরুণসম্প্রদায় জাতীয়তাবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অপদার্থ মাঞ্জু শাসনের অবসান চায়। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে চিনে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটে।


চিনের প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের পটভূমি/ প্রেক্ষাপট 


১. বিদেশি নিয়ন্ত্রণ: 

১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকেই চিন বিদেশি শক্তিবর্গের আধা-উপনিবেশে পরিণত হয়েছিল। নানকিং সন্ধির মাধ্যমে চিন পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের কাছে উন্মুক্ত হয়। ধীরে ধীরে চিনে বিদেশি শক্তিবর্গ প্রবেশ করে এবং চিনের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে তোলে। বিদেশি শক্তির হাত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য চিনারা বিপ্লবের পথ বেছে নেয়।


২. মাঞ্জু সরকারের অপদার্থতা: 

বহু চিনাই মনে করত যে বিদেশি মাঞ্জুরা চিনা মিং রাজবংশের উচ্ছেদ ঘটিয়ে চিনে চিং রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেছে। নানকিং সন্ধি চুক্তি (১৮৪২ খ্রি.) থেকে শুরু করে বক্সার প্রোটোকল (১৯০১ খ্রি.) স্বাক্ষরপর্বে মাঞ্জুশাসনের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। মাঞ্জুশাসকদের অপদার্থতার সুযোগে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ চিনকে শোষণ করতে শুরু করলে চিনা জনসাধারণ মাঞ্চুশাসনের অবসান কামনায় বিপ্লবী হয়।


৩. বিভিন্ন গুপ্ত সমিতির ভূমিকা: 

চিনের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠা গুপ্ত সমিতিগুলি প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের পটভূমি রচনায় সাহায্য করেছিল। বিভিন্ন গুপ্ত সমিতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘হোয়াইট লোটাস সোসাইটি’, ‘হেভেন অ্যান্ড আর্থ সোসাইটি’, ‘ট্রায়ার্ড সোসাইটি’ ইত্যাদি। এইসব গুপ্ত সমিতিগুলি মাঞ্জুসরকার-বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল।


৪. আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির প্রভাব:

ইংল্যান্ডের গৌরবময় বিপ্লব, আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ, ফরাসি বিপ্লব, গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধ, ফ্রান্সের জুলাই ও ফেব্রুয়ারি বিপ্লব, জার্মানি ও ইতালির ঐক্য আন্দোলন ইত্যাদি আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি চিনের জনসাধারণকে বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ করে।


৫. চীনের প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবে সান-ইয়াৎ সেনের ভূমিকা: 

ডা. সান-ইয়াৎ সেনই প্রথম চিনের মানুষকে শেখান যে চিনের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা দরকার। তিনি বলেন, একমাত্র প্রজাতন্ত্র গঠনের মধ্যে দিয়ে চিনের জনগণের নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হতে পারে।


১. তিনটি ননীতি ঘোষণা : ডা. সেন চিনের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যেকার কর্মসূচিগুলিকে একজোট করার লক্ষ্যে তিনটি নীতি ঘোষণা করেন। এই তিনটি নীতি ছিল— a. জনগণের জাতীয়তাবাদ, b. জনগণের অধিকার, c.  জনগণের জীবিকা বা সমাজতন্ত্র।


২. সংঘ গঠন : চিনাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রসারের লক্ষ্যে তিনি গঠন করেন ‘টুং-মেং-হুই’ নামে একটি সম্মিলিত সংঘ।



৩. সরকার গঠন : ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে চিনের বিধবা সম্রাজ্ঞী জু সি মারা গেলে মাঞ্জুবংশীয় এক নাবালক চিনের সম্রাট হন। ডা. সেন এ সময়ে মাঞ্চুবংশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে নানকিং দখল করেন এবং গঠন করেন অস্থায়ী প্রজাতান্ত্রিক সরকার (১৯১১ খ্রি.)। 


৪. কুয়োমিনটাং দল গঠন: ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ২৫ আগস্ট কুয়োমিনটাং নামে এক জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন। পূর্বেকার টুং-মেং-হুই সংঘের ও অন্যান্য প্রগতিশীল দলের সদস্যগণ এই দলে মিশে যান। সোভিয়েত সাহায্য নিয়ে এই দল মাঞ্জু বংশের পতন ঘটায় ও আধুনিক চিনের উত্থান নিশ্চিত করে।


তথ্য সূত্র:

ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×