দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করো | Causes of World War II


 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কীভাবে শুরু হয় | প্রেক্ষাপট


সূচনা: 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যেই বিশ্ববাসী আর-একটি বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও ছিল একাধিক কারণের সমন্বিত ফল।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি/ প্রেক্ষাপট 


১. ভার্সাই সন্ধির প্রভাব: 

ভার্সাই সন্ধির চুক্তিতে যেসব ত্রুটি ছিল সেগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘটাতে সাহায্য করে। ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানিকে যেভাবে অবমাননা করা হয়েছিল তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে জার্মানি যুদ্ধ-পরিস্থিতি তৈরি করে।


২. হিটলারের বিদেশ নীতি: 

হিটলার যে বিদেশ নীতি গ্রহণ করেন, তার পরিণতি হিসেবে মিত্রশক্তিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্বের সূচনা ঘটে। হিটলারের যুদ্ধপ্রবণ বিদেশ নীতির জন্যই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়।


৩. বিভিন্ন দেশের আগ্রাসী নীতি: 

হিটলারের উগ্র জাতীয়তাবাদকে অনুসরণ করে জাপান এবং ইতালিও আগ্রাসী নীতি নেয়। জাপানের মাঞ্চুরিয়া অধিকার ও ইতালির আবিসিনিয়া অধিকার সেই আগ্রাসী নীতিরই পরিচায়ক। তাদের এই আগ্রাসী মনোভাব যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করে।


৪. তোষণ নীতি:

ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জার্মানির প্রতি তোষণ নীতি গ্রহণ করে হিটলারকে প্রতিরোধ করতে চেয়েছিলেন। তারা (ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স) জার্মানির থেকেও রাশিয়াকে বেশি বিপজ্জনক বলে মনে করেছিল। কিন্তু এই তোষণ নীতি হিটলারের আগ্রাসী মনোভাবকে বাড়িয়ে দিলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়।


৫. ঔপনিবেশিক দ্বন্দ্ব: 

ভার্সাই চুক্তির শর্তানুসারে জার্মানির উপনিবেশগুলি মিত্রশক্তিবর্গ (ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সোভিয়েত রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। ফলে জাপান, ইতালি ও জার্মানি উপনিবেশ বিস্তারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। পরিণতিতে ঔপনিবেশিক দ্বন্দ্ব বাধে যা বিশ্বযুদ্ধ ঘটাতে সাহায্য করে।


৬. নিরস্ত্রীকরণে ব্যর্থতা: 

বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি যাতে অস্ত্র ত্যাগ করে তার জন্য জেনেভাতে নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন (১৯৩২ খ্রি.) বসে। কিন্তু কোনো দেশই অস্ত্র সংবরণে রাজি না হওয়ায় ওই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়, ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়।


৭. জাতিসংঘের ব্যর্থতা: 

জাতিসংঘ যুদ্ধ-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। ইতালির আবিসিনিয়া অধিকার, জাপানের মাঞ্চরিয়া অধিকার, জার্মানির চেকোশ্লোভাকিয়া দখলের প্রতিকার করতে লিগ ব্যর্থ হয়। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়।


৮. প্রত্যক্ষ কারণ—হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণ: বিশ্বজুড়ে যখন যুদ্ধের পরিবেশ বিরাজমান, তখন হিটলার পোল্যান্ড (১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর) আক্রমণ করেন। পোল্যান্ড দেশটি যেহেতু ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের বন্ধুরাষ্ট্র ছিল, তাই কয়েক দিনের মধ্যেই তারা জার্মানি আক্রমণ করে। এরপর একে একে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ফলে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটে।


তথ্য সূত্র:

ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×