ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল | 1942 Movement in India


 ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল 


ভূমিকা: 

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্ববৃহৎ গণ আন্দোলনটি হল ভারত ছাড়ো বা আগস্ট আন্দোলন (১৯৪২ খ্রি.)। ভারতে ব্রিটিশ শাসন অবসানের লক্ষ্যে অন্তিম গণপ্রচেষ্টা ছিল এই আন্দোলন। এই আন্দোলনের পর থেকেই ভারতবাসী বিশ্বাস করতে শুরু করে যে তারা স্বাধীনতা পাচ্ছে। আগস্ট মাসে এই আন্দোলন হয়েছিল বলে একে ‘আগস্ট আন্দোলন’-ও বলা হয়।


ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ/পটভূমি/প্রেক্ষাপট


১. ক্রিপস প্রস্তাবের ব্যর্থতা:

ক্রিপস প্রস্তাব (১৯৪২ খ্রি.) শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হলে ভারতবাসী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা বুঝে নেয় যে ব্রিটিশ সরকার কখনোই ভারতবাসীর হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না। তাই সরাসরি ব্রিটিশের সঙ্গে সংগ্রামের জন্য ভারতবাসী প্রস্তুত হয়।


২. দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। চাল, কেরোসিন, কাপড়, ওষুধ ইত্যাদি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ভারতীয়দের মনে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।


৩. স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা: 

স্বাধীনতালাভের জন্য ভারতবাসী আর বিন্দুমাত্র অপেক্ষা করতে রাজি ছিল না। অসহযোগ আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন ভারতবাসীর স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিল। ভারতবাসী চেয়েছিল আর-একটি সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন গড়ে তুলে স্বাধীনতা অর্জন নিশ্চিত করতে।


৪. জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনা: 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জাপানের প্রাথমিক সাফল্য দেখে ভারতবাসী উৎসাহিত হয়। তারা মনে করে যে জাপান ইংল্যান্ডকে পরাজিত করলে তারা স্বাধীন হবে। এই জন্য ভারতীয় নেতারা এক বৃহত্তর ব্রিটিশবিরোধী গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়।



ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ফলাফল/তাৎপর্য


১. আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়: 

ভারত ছাড়ো আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত করেছিল। এই আন্দোলনের সুবাদেই ভারতবাসী স্বাধীনতা প্রাপ্তির চূড়ান্ত পর্বে এসে পৌঁছায়।


২. জাতীয় বিপ্লবে রূপান্তর: 

ভারত ছাড়ো আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনকে জাতীয় বিপ্লবে রূপান্তরিত করে। কোনো নেতা ও সংগঠন ছাড়াই একটা জাতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে—এ নিদর্শন ইতিপূর্বে দেখা যায়নি।


৩. স্বাধীনতার ভিত্তিস্থাপন: 

ভারত ছাড়ো আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতার ভিত্তিভূমি রচনা করে। একদিকে ভারতের বাইরে থেকে সুভাষচন্দ্রের বিপ্লবী তৎপরতায় ব্রিটিশ সরকার দিশাহীন হয়ে পড়ে। অপরদিকে ভারতের মধ্যে ৪২-এর আন্দোলন ব্রিটিশ শাসনের ভিতকে দুর্বল করে তোলে।


৪. ব্রিটিশের বোধোদয়:

ভারত ছাড়ো আন্দোলন ব্রিটিশের বোধোদয় ঘটায়। ব্রিটিশ বুঝে নেয় আর ঔপনিবেশিকতার বাঁধনে ভারতকে পরাধীন রাখা যাবে না, এবার ভারত ছেড়ে তাদের চলে যেতেই হবে।


তথ্য সূত্র:

ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে মুখোপাধ্যায়।

 

2 মন্তব্যসমূহ

  1. আরো এক, দুটো পয়েন্ট দিলে ব্রট প্রশ্নের জন্য পড়তে সুবিধা হয়

    উত্তরমুছুন
  2. মহিলাদের অবদান, বিস্তারের কারণ এগুলো দিলে আরও ভালো হত

    উত্তরমুছুন
নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×