আকবরের সাম্রাজ্য বিস্তারনীতির পরিচয় দাও | Imperial Expansion Policy of Akbar


বিজেতা হিসেবে আকবরের কৃতিত্ব | আকবরের সাম্রাজ্য বিস্তার

ভূমিকা: ‘মোগল-ই-আজম' মহামতি আকবরই হলেন প্রথম মুসলমান নরপতি যিনি ভারতকে সার্বভৌম রূপ দান করেন। ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে আকবরের বিজয়রথ চলতে শুরু করে, তা থামে ১৬০১ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ভারতে আসিরগড় দুর্গ জয়ের পর। তিনি মোট ১৮টি প্রদেশকে মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।

বিজেতা হিসেবে আকবর:

১. উত্তর ভারত জয়: উত্তর ভারতের মালব ও গণ্ডোয়ানা রাজ্য দুটিকে আকবর মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। আবদুল্লা খান উজবেগ-এর নেতৃত্বে মোগল বাহিনী ১৫৬১ খ্রিস্টাব্দে মালব অধিকার করে মধ্যপ্রদেশের স্বাধীন হিন্দুরাজ্য গণ্ডোয়ানা (বর্তমান জব্বলপুর) দখলে (১৫৬৪ খ্রি.) নেতৃত্ব দেন কারা প্রদেশের শাসনকর্তা আসফ খাঁ।

২. রাজপুতানা জয়: রাজপুতানায় মোগল কর্তৃত্ব গড়ে তুলতে আকবর সচেষ্ট হন। তিনি ১৫৬৭ খ্রিস্টাব্দে মেবারের রাজধানী চিতোর আক্রমণ করে রানা উদয় সিংহকে পরাজিত করেন। রানা উদয় সিংহের পুত্র রানা প্রতাপ সিংহকে তিনি হলদিঘাটের যুদ্ধে (১৫৭৬ খ্রি.) পরাস্ত করেন। এ ছাড়াও রণথম্বোর (১৫৬৯ খ্রি.), কালিঞ্জর (১৫৬৯ খ্রি.), বিকানির (১৫৭০ খ্রি.), জয়সলমির (১৫৭০ খ্রি.), মারওয়াড় (১৫৭০ খ্রি.) প্রভৃতি রাজ্য আকবরের বশ্যতা স্বীকার করে।

৩. গুজরাত বিজয়: আর্থিক সমৃদ্ধির জন্যই বাণিজ্যকেন্দ্র গুজরাতকে মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত করা দরকার বলে মনে করতেন আকবর। ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজেই গুজরাত আক্রমণ করেন এবং আহমেদাবাদ দখল করে নেন। গুজরাত জয়ের ফলে পশ্চিম উপকূলের সমৃদ্ধিশালী ব্রোচ, সুরাট, ক্যাম্বে প্রভৃতি বন্দরগুলির ওপর মোগল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

৪. বাংলা, বিহার ও ওড়িশা জয়: ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দে মোগলবাহিনী নিয়ে আকবর পাটনার দিকে অগ্রসর হয়ে হাজিপুর, পাটনা, মুঙ্গের, ভাগলপুর দখল করেন। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে রাজমহলের যুদ্ধে দাউদ খাঁকে পরাজিত করে আকবর সাময়িকভাবে বাংলায় মোগল শাসন বলবৎ করেন। ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে মানসিংহের নেতৃত্বে মোগলরা ওড়িশা জয় করে।

৫. উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত জয়: ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে আকবর কাবুল দখল করেন। এরপর একে একে তিনি সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও কান্দাহার বিজয় সম্পূর্ণ করেন। কান্দাহার বিজয়ের পর সমগ্র উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতজুড়ে মোগল আধিপত্যের বিস্তার ঘটে।

৬. দাক্ষিণাত্য জয়: দাক্ষিণাত্যের খান্দেশ, আহম্মদনগর, বিজাপুর ও গোলকুণ্ডা—এই চারটি রাজ্য ছিল উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে আকবর খান্দেশ ও আহম্মদনগর—এই দুই রাজ্যে অভিযান চালান। প্রথমে খান্দেশ অধিপতি রাজা আলি খান আকবরের বশ্যতা স্বীকার করেন। পরে খান্দেশের দক্ষিণে অবস্থিত আহম্মদনগরের বেরার অঞ্চলটি আকবর মোগল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। আকবর বেরার, খান্দেশ ও আহম্মদনগরের কিছুটা অংশ নিয়ে একটি আলাদা সুবা গঠন করেন। ১৬০১ খ্রিস্টাব্দে আকবর তাঁর জীবনের শেষ যুদ্ধে আসিরগড় দুর্গ জয় করেন। 

মূল্যায়ন: পিতা হুমায়ুনের মৃত্যুর পর আকবর একক কৃতিত্বে মোগল সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব রক্ষা করে এক সর্বভারতীয় মোগল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিবদমান রাজ্যগুলিকে এক বিশাল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে তিনি জাতীয় সংহতি ও ঐক্য গড়ে তোলেন। 


তথ্য সূত্র:

ইতিহাস শিক্ষক- অষ্টম শ্রেণী | জে. মুখোপাধ্যায়।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×