ভূমিকা:
মধ্যযুগের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার প্রধান চালিকাশক্তি ছিল সামন্ততন্ত্র। পঞ্চম শতক থেকে প্রায় একহাজার বছরব্যাপী ইউরোপীয় অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল সামন্তপ্রভুদের হাতে। কিন্তু ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের পর থেকে মূলত সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয় শুরু হয়।
সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয়ের কারণ:
সামন্ততন্ত্রের অবক্ষয়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হল—
১. কৃষকদের শ্রমিকশ্রেণিতে রূপান্তর:
সামন্তপ্রভুদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বহু কৃষক কাজের আশায় শহরমুখী হয়। বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে তারা জীবিকার জন্য নিজেদের নিয়োজিত করে। ফলে সামন্তদের অধীনস্থ প্ৰজা (কৃষক) ও ভূমিদাসদের সংখ্যা কমে যায় এবং সামন্তপ্রথা দুর্বল হয়ে পড়ে।
২. ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ:
ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্রের মূলভিত্তি ছিল ম্যানর বা কৃষিখামার এবং সার্ফ বা ভূমিদাস। ১০১৬-১২৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলা ৮টি ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে যোগ দিতে গিয়ে সামন্তপ্রভুরা তাদের ম্যানরগুলি বিক্রি করে দেন বা ম্যানর ব্যবস্থার অবলুপ্তি ঘটান। ফলশ্রুতিতে সার্ফ বা ভূমিদাসরাও মুক্ত হয়। সার্বিকরূপে সামন্তপ্রথার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
৩. নতুন নতুন নগর ও বন্দরের উৎপত্তি:
নদীপথ ধরে বাণিজ্যের সুবিধাকে কাজে লাগানোর জন্য নদীতীরে নগর ও বন্দর গড়ে ওঠে। এইসব নগর ও বন্দরগুলিতে গড়ে-ওঠা শিল্পকারখানায় কাজের আশায় কৃষক ও ভূমিদাসরা ম্যানর ছেড়ে পালিয়ে আসে। ফলে সামন্ততন্ত্রের ভিত দুর্বল হয়ে পড়ে।
৪. ব্ল্যাকডেথ ও কৃষকবিদ্রোহ:
চতুর্দশ শতকে ইংল্যান্ডে ‘ব্ল্যাকডেথ’ নামক মহামারির ফলে বহু সামন্তপ্রভু ও ভূমিদাসের অকালমৃত্যু ঘটে। এছাড়াও ওয়াট টাইলার, জনবল প্রমুখের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কৃষকবিদ্রোহগুলির অনুসরণে বিভিন্ন দেশে কৃষকবিদ্রোহ দেখা দিলে সামন্ততন্ত্রের ভিত আলগা হয়ে পড়ে।
৫. রাজতন্ত্রের উদ্ভব:
ইউরোপের বহু দেশে শক্তিশালী রাজতন্ত্রের উদ্ভব ঘটলে, রাজারা সামন্তপ্রভুদের ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি খর্ব করতে শুরু করেন। সামন্তপ্রভুদের থেকে বকেয়া কর আদায় করে দেশের অর্থনীতিকে তারা মজবুত করে তোলেন। এ ছাড়া কামান, বন্দুক, গোলাবারুদ প্রভৃতি রাজাদের হাতে আসায় সামন্তদের কাছ থেকে সামরিক সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ফুরায়। ফলে সামন্ততন্ত্রের পতন ঘটে।
তথ্য সূত্র:
অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস শিক্ষক | জে. মুখোপাধ্যায়।