বৈজ্ঞানিক বিপ্লব | History Honours CC6 Suggestion | Calcutta University
সাধারণভাবে ধরে নেওয়া হয় যে, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিপ্লব হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন আবিষ্কার। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে নতুন বৈজ্ঞানিক সূত্র বা প্রযুক্তির আবিষ্কার হয়নি, বিপ্লব ঘটেছিল বৈজ্ঞানিক চিন্তার ক্ষেত্রে, মননের ক্ষেত্রে, মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণার পরিবর্তন ঘটেছিল। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ও পৃথিবীর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে নতুন ধারণার উদ্ভব হয়েছিল। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মানুষের অবস্থান নিয়ে কৌতূহল জাগ্রত হয়েছিল। বৈজ্ঞানিক বিপ্লব হল দৃষ্টিভঙ্গি, ধারণা এবং বৈজ্ঞানিক দর্শনের বিপ্লব।
বৈজ্ঞানিক মনন তৈরি হয়েছিল, অনুসন্ধিৎসু মন গড়ে উঠেছিল। এই পর্বে অনুসন্ধিৎসু মানুষ প্রাকৃতিক জগতের নতুন সংজ্ঞা খুঁজেছিল, প্রাকৃতিক যেসব ঘটনা ঘটে তার কারণ ও চরিত্র জানার প্রয়াস চালিয়েছিল। পৃথিবীর আবর্তন স্বাভাবিক কারণে ঘটে না ঈশ্বরের ইচ্ছায় কাজ করে তা জানার চেষ্টা শুরু হয়েছিল। বন্যার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা।
সাধারণভাবে ধরে হয়, ঋতুচক্রের আবর্তনের পেছনে যে বৈজ্ঞানিক কারণ আছে তা খুঁজে বার করার চেষ্টা হয়। পৃথিবীর আবর্তন এবং ব্রহ্মাণ্ডে পৃথিবীর অবস্থান বোঝার চেষ্টা করেছিলেন বৈজ্ঞানিকরা। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের সঙ্গে তিনটি সমস্যা জড়িত ছিল। যদি সব প্রাকৃতিক কারণে ঘটে, ঈশ্বরের যদি কোনো ভূমিকা না থাকে তবে মানুষের অবস্থান কীভাবে নির্ধারিত হবে। প্রাকৃতিক কার্য-কারণ সম্পর্ক কীভাবে নির্ধারিত হবে, এর প্রভাব কি হবে।
বিজ্ঞানের বিশ্বজনীন ভাষা কি হবে, আবর্তন গতিতত্ত্ব ইত্যাদি কীভাবে ব্যাখ্যা করা হবে। মধ্যযুগে ধরে নেওয়া হত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ও মানুষের অবস্থান সব কিছু ঈশ্বরের নিয়মের অধীন। ঈশ্বরের অভিপ্রায় দিয়ে জাগতিক সব রহস্য ব্যাখ্যা করা হত। অ্যারিস্টটলের যুক্তি-বিজ্ঞান দ্বাদশ শতকে আবিষ্কৃত হয়, আরব পণ্ডিতরা তা ইউরোপে পৌঁছে দেন। পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত অ্যারিস্টটল যুগিয়েছিলেন বিশ্বজনীন বিজ্ঞানের ভাষা। রেনেশাঁস যুগে আবিষ্কৃত হল নতুন জগৎ, নতুন মানুষ ও নতুন দেশ, ইউরোপ নতুন আবিষ্কৃত অঞ্চলে আধিপত্য স্থাপন করেছিল। ইউরোপে নতুন শিক্ষার আলোকে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও মনন পাল্টে ছিল। অ্যারিস্টটলের যুক্তি-বিজ্ঞান দিয়ে সব কিছুর যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা পাওয়া যেত না।
তথ্য সূত্র:
আধুনিক ইউরোপ আদি পর্বের রূপান্তর (১৪০০-১৭৮৯) - সুবোধ কুমার মুখোপাধ্যায়।
(আলোচ্য প্রশ্নের উত্তরটি উপরিউক্ত বই থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই বইয়ের প্রকাশক এবং লেখকের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ)।