ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধীজির অবদান



ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীজির অবদান/ ভূমিকা | ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মহাত্মা গান্ধীর ভূমিকা

ভূমিকা:

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন মােহনদাস করমচাঁদ গান্ধি। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির আগে পর্যন্ত প্রায় তিরিশ বছর ধরে তিনিই ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্যমণি। গান্ধিজির সফল নেতৃত্বের মধ্যে দিয়ে ভারতবাসী এক স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। 


ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীজি

১. রাজনৈতিক আদর্শ: গান্ধিজির রাজনৈতিক আদর্শ ছিল অহিংস সত্যাগ্রহী আদর্শ। তিনি রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সত্য ও ভালােবাসার আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। রাস্কিন, টলস্টয়, থরাে ও এমারসনের রচনাবলি গান্ধিজির রাজনৈতিক আদর্শকে প্রভাবিত করে। কংগ্রেসের পরবর্তী নেতাদের কাছে গান্ধিজির রাজনৈতিক আদর্শ ছিল অনুকরণীয়।


২. ভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ: সুদীর্ঘ ২১ বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় কাটিয়ে গান্ধিজি ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ফিরে আসেন। তাঁর রাজনৈতিক গুরু গােপালকৃয় গােখলের পরামর্শ মেনে তিনি সক্রিয়ভাবে যােগ দেন। আমেদাবাদে সবরমতী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে গান্ধিজি জাতীয় নেতা হিসেবে প্রস্তুতি নেন। ।


৩.  জাতীয় নেতা হিসেবে উত্থান : গান্ধিজি পরপর তিনটি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় নেতা হিসেবে নিজের উত্থান ঘটান। প্রথমে বিহারের চম্পারনে রাউলাট সত্যাগ্রহ কৃষকদের সত্যাগ্রহ আন্দোলনে (১৯১৭ খ্রি.) নেতৃত্ব দেন। এরপর ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাতের খেদা সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দিয়ে নেতা হিসেবে তিনি তার দক্ষতা প্রমাণ করেন। আর গুজরাতের আমেদাবাদে শ্রমিকশ্রেণির আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় নেতা হিসেবে গান্ধিজি নিজেকে মেলে ধরেন।


৪. খিলাফত আন্দোলন ও গান্ধিজি : তুরস্কের খলিফাকে তাঁর শাসক পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ভারতের মুসলমানরা খিলাফত আন্দোলন শুরু করে (১৯২০ খ্রি.)। খিলাফত আন্দোলনকারীরা গান্ধিজিকে তাদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার আবেদন জানালে গান্ধিজি সাদরে তা গ্রহণ করেন।


৫. অসহযােগ আন্দোলন ও গান্ধিজি : গান্ধিজির পরিকল্পনা মেনে জাতীয় কংগ্রেস অসহযােগ আন্দোলন (১৯২০ খ্রি.) শর করে। গান্ধিজি চেয়েছিলেন এই আন্দোলনের মাধ্যমে অহিংস পথে স্বরাজ অর্জন করতে। কিন্তু চৌরিচৌরার ঘটনায় মর্মাহত হয়ে গান্ধিজি অসহযােগ আন্দোলন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন।


৬. আইন অমান্য আন্দোলন ও গান্ধিজি : গান্ধিজি তাঁর বিখ্যাত ডান্ডি অভিযানের মাধ্যমে সরকারি লবণ আইন ভঙ্গ করে আইন অমান্য আন্দোলনের (১৯৩০ খ্রি., ৬ এপ্রিল) সূচনা ঘটান। আন্দোলন থামানাের উদ্দেশ্যে বড়ােলাট আরউইন গান্ধিজির সঙ্গে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হন। প্রথম ও দ্বিতীয় গােলটেবিল বৈঠকে ভারতীয়দের সমস্যা ও দাবির কোনাে সমাধানসূত্র না মেলায় আইন অমান্য আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনা ঘটে। সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির প্রতিবাদে গান্ধিজি পুনার যারবেদা জেলে আমরণ অনশন শুরু করেন। অবশেষে আম্বেদকরের সঙ্গে রাজেন্দ্র প্রসাদের পুনা চুক্তি (১৯৩১ খ্রি.) স্বাক্ষরের পর গান্ধিজি মুক্তি পান। আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।


৭. ভারত ছাড়াে আন্দোলন ও গান্ধিজি : গান্ধিজির পরিকল্পনা মেনে শুরু হয় ভারত ছাড়াে বা আগস্ট আন্দোলন (১৯৪২ খ্রি.)। আন্দোলনের আগের দিনেই গান্ধিজিসহ জাতীয় নেতাদের ব্রিটিশ সৈন্য গ্রেপ্তার করে। আন্দোলনের শেষপর্বে ব্রিটিশ শাসক যখন তীব্র দমন নীতির আশ্রয় নেয় তখন তার বিরুদ্ধে গান্ধিজি ২১ দিনের অনশন করেন। অবশেষে ব্রিটিশ শাসক তাকে মুক্তি দিলে এই আন্দোলনের অবসান ঘটে।


মূল্যায়ন: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধিজি ছিলেন অহিংসার প্রতীক অথচ স্বাধীনতার পর তাঁকেও হিংসার বলি হতে হয়েছিল। ত্যাগ ও সত্যের প্রতিমূর্তি ছিলেন গান্ধিজি। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে জাতির জনক' আখ্যা দেওয়া হয়েছে।


গ্রন্থপঞ্জি: ইতিহাস শিক্ষক (জে মুখোপাধ্যায়)


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

World News

نموذج الاتصال

×